প্রিয় চাকরিপ্রার্থীগণ, বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় ৫টি বড় ভুল এড়ানোর উপায় সংক্রান্ত ব্লগে আপনাদের স্বাগতম। আগামী নভেম্বরের শেষভাগে ৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আপনারা জানেন, বিসিএস লিখিত পরীক্ষার আগে বেশি বেশি লিখে অনুশীলন ও মক টেস্ট দিয়ে প্রস্তুতি যাচাই করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পরীক্ষার হলে লেখার ক্ষেত্রে অর্জিত জ্ঞানকে সঠিক ও আকর্ষণীয় উপায়ে খাতায় উপস্থাপন করাই মূল চ্যালেঞ্জ।  

পরীক্ষার সময় নতুন করে কিছু পড়ে যে অনেকটা এগিয়ে যাবেন– এমন সম্ভাবনা কম। বরং সুস্থ থাকা ও ফোকাস ধরে রাখাই সবচেয়ে কাজে আসবে। চলুন জেনে নিই— বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় সবচেয়ে সাধারণ পাঁচটি ভুল এবং তার সহজ সমাধান। 

১) প্রশ্ন না বুঝে উত্তর লেখা

উত্তর লেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুল হলো— প্রশ্নে যা চাওয়া হয়েছে তা না বুঝেই লেখা শুরু করা। প্রতিটি প্রশ্ন পড়ার পর অন্তত একবার ধীরে ধীরে আবার পড়ুন—প্রশ্নে ‘কী’ ও ‘কতটুকু’ জানতে চাওয়া হয়েছে, কোন অংশে জোর দেওয়া হয়েছে — তা নিশ্চিত হয়ে নিন। প্রশ্নে যদি ‘তুলনা’, ‘ব্যাখ্যা’, ‘উদাহরণ’ ইত্যাদি নির্দেশ থাকে সেগুলো অবশ্যই গুছিয়ে লিখতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো আন্ডারলাইন করুন এবং উত্তর লেখার আগে সংক্ষেপে একটি আউটলাইন (৩–৫টি পয়েন্ট) লিখে নিন। যেমন— প্রশ্নে যদি দুইটি কনসেপ্ট তুলনা করে দেখাতে বলে তাহলে কনসেপ্ট দুটির সংজ্ঞা ও উদাহরণ খুব বেশি ব্যাখ্যা না করে বরং সংক্ষেপে সংজ্ঞা ও উদাহরণ যুক্ত করুন এবং তুলনা অংশে বেশি সময় দিন। 

২) সময়ের হিসাব না রাখা (টাইম ম্যানেজমেন্ট)

শুরুর দিকের প্রশ্নে জন্য অনেক বেশি সময় ব্যয় করাতে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর লিখে শেষ করতে না পারা একটি ঘোরতর সমস্যা।  ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় প্রতি নম্বরের জন্য সময় ১.২ মিনিট এবং ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় প্রতি নম্বরের জন্য সময় ১.৮ মিনিট সময় পাবেন। সে হিসেবে, পরীক্ষার আগে প্রতিটি প্রশ্নের জন্য একটি সময়সীমা ঠিক করে নিন। কারণ, কয়েকটি উত্তর ‘বেশি ভালো’ লিখতে গিয়ে কয়েকটি উত্তর একেবারে মিস করে ফেললে মোট নম্বর কোনোভাবেই বেশি আসবে না।

কোনো একটি প্রশ্নে আটকে গেলে অতিরিক্ত সময় নষ্ট না করে পরে সেটি সমাধানের চেষ্টা করুন। প্রথমে অল্প সময়ে সহজ ও কম-মার্কের ছোট প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে পরে বড় ও উচ্চ-মার্কের প্রশ্নের জন্য সময় রাখতে পারেন। সময় কমে গেলে বুলেট পয়েন্টে একবাক্যে যুক্তিগুলো লিখুন। এতে মূল্যায়নকারী আপনার যুক্তিগুলো দেখেই নম্বর দিতে পারবেন।

৩) তাড়াহুড়ো করে ভুল করা

অনেক সময় সহজ প্রশ্নগুলোও তাড়াহুড়ো এবং অসাবধানতাবশত জানা উত্তরও ভুল হয়ে যায়। এমনকি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণেও অনেকে ভুল কনসেপ্ট ধরে পুরো উত্তর লিখে আসেন। বিশেষত, সম্প্রতি বিসিএসের প্রশ্নে যে ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে তাতে “সহজ টপিকে জটিল প্রশ্ন” করার সম্ভাবনা বেশি। তাই ভালো করে প্রশ্ন পড়ে দেখবেন— সহজ বা ‘কমন প্রশ্ন’ বলে মনে হওয়া কোনো Trick Question-এর ‘ট্র্যাপে’ পড়ছেন কিনা! 

৪) অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা

বিসিএস দেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। এই পরীক্ষার লিখিত পর্বও কঠিনই হবে— এটা মেনে নিয়েই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। কারণ পরীক্ষার ভয় ও টেনশন অনেক সময় জানা জিনিসও ভুল করিয়ে দেয়। পরীক্ষার আগে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

পরীক্ষার হলে মাথা কাজ না করলে বা অস্থির লাগলে একটু বিরতি নিন—১ মিনিট নিঃশ্বাসের ব্যায়াম (Breathing Exercise) করে নিন। যদি কোন প্রশ্ন মনে না আসে, সেটিকে পরের জন্য রেখে অন্যটি শুরু করুন। 

৫) মানহীন বড় উত্তর লেখা

অনেক পরীক্ষার্থী মনে করেন, বেশি লিখলেই বেশি নম্বর পাওয়া যাবে। কিন্তু আসলে পরিমাণ নয়, গুণগত মানই মুখ্য। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উত্তর লেখার মান ধরে রাখতে হবে। মাঝখানে অগোছালো বা পুনরাবৃত্ত অংশ এলে পরীক্ষকের মনোযোগ হারায়।

  • নতুন নিয়মে পরীক্ষকরা প্যানেলের মাধ্যমে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন। অর্থাৎ, যিনি ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর মূল্যায়ন করবেন, তিনি সবগুলো খাতায় ঐ ১ নম্বর প্রশ্নেরই উত্তর চেক করবেন। ফলে উত্তর লেখার সময় ধারাবাহিকতা রক্ষা করা না হলে মূল্যায়নকারীর বিরক্তি উদ্রেক হতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো উত্তর পরে লিখতে চাইলে আনুমানিক হিসেবে কিছু জায়গা ফাঁকা রেখে এবং প্রশ্নের সিরিয়াল মেনে পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর লেখা ভালো। 
  • উত্তরপত্র জমা দেওয়ার আগে অন্তত ৫ মিনিট সময় রেখে সব উত্তর একবার চোখ বুলিয়ে দেখুন।
  • কাটাকাটি, বানান ও তথ্যগত ভুলে সতর্ক থাকুন।
  • উত্তরকে তথ্যনির্ভর করুন — প্রয়োজনে পয়েন্ট, গ্রাফ, চার্ট, চিত্র, ম্যাপ বা রেফারেন্স ব্যবহার করুন। তবে লেখার তুলনায় গ্রাফ-চার্টের আধিক্য কাম্য নয়।  
  • শুধু “গড়পড়তা” উত্তর না দিয়ে লেখার উপস্থাপনায় বৈচিত্র্য আনুন। কারণ আকর্ষণীয় ও সুনির্দিষ্ট উত্তর দিলে কম লিখেও বেশি নম্বর পাওয়া যায়।

এছাড়াও বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় কোন সাবজেক্টের জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নেবেন— তার বিস্তারিত গাইডলাইন পেয়ে যাবেন Live Written ওয়েবসাইটে। লিখিতই পরীক্ষার সম্পূর্ণ দিকনির্দেশনার জন্য এখুনি একবার পড়ে ফেলুন।

Install Live Written App